কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদারে গুরুত্বারোপ করে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে ভারত ও আসিয়ান।
আজ (১০ অক্টোবর, ২০২৪) লাওসের ভিয়েনতিয়ানে অনুষ্ঠিত ২১তম আসিয়ান-ভারত শীর্ষ সম্মেলনে আসিয়ান এবং ভারত ডিজিটাল রূপান্তর ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। উভয় পক্ষই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে যা তাদের ভবিষ্যৎ সহযোগিতার দিক নির্দেশ করে।

ডিজিটাল রূপান্তরের উপর আসিয়ান-ভারত যৌথ বিবৃতি
ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামো (ডিপিআই), আর্থিক প্রযুক্তি (ফিনটেক), সাইবার সুরক্ষা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার একটি ব্যাপক কৌশল নির্ধারণ করেছে।

ডিপিআই-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করে, ভারত এবং আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলো জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে কার্যকর শাসন কাঠামো তৈরি করার লক্ষ্য নিয়েছে।

ভারতের আসিয়ান ডিজিটাল মাস্টারপ্ল্যান ২০২৫ (এডিএম ২০২৫) এর প্রতি সহায়তার জন্য প্রশংসা জানানো হয়েছে এবং বিশেষ করে কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, এবং ভিয়েতনামে কেন্দ্রগুলি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্ঞান ভাগাভাগি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি উদ্যোগে ভারতের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।

নতুন আসিয়ান ডিজিটাল মাস্টারপ্ল্যান ২০২৬-২০৩০ (এডিএম ২০৩০) এর মাধ্যমে আসিয়ান ও ভারতের ডিজিটাল অগ্রগতির পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতির জন্য সহযোগিতা আরও জোরদার করা হবে।

আর্থিক প্রযুক্তি ও সাইবার সুরক্ষা উন্নয়ন
আর্থিক প্রযুক্তি উভয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আসিয়ান ও ভারতের মধ্যে পেমেন্ট সিস্টেমের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ডিজিটাল পরিষেবা সরবরাহের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সাইবার নিরাপত্তা নিয়েও উভয় পক্ষ আলোচনা করেছে, যেখানে আসিয়ান-ভারত ট্র্যাক ১ সাইবার নীতি সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সাইবার অবকাঠামোর সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী কাঠামো গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আসিয়ান ও ভারত দক্ষতা বৃদ্ধি ও নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিকে কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছে।

আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা গঠন
অন্যদিকে, আসিয়ান-ভারত সংযুক্ত কৌশলগত অংশীদারিত্ব শক্তিশালীকরণ সম্পর্কিত যৌথ বিবৃতি আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও নেভিগেশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে উভয় পক্ষই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা
সম্মেলনে উভয় পক্ষই আসিয়ান-ভারত পণ্য বাণিজ্য চুক্তির (এআইটিআইজি) পর্যালোচনা দ্রুত সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছে।
মানুষে-মানুষে সংযোগ বৃদ্ধির জন্য ২০২৫ সালকে আসিয়ান-ভারত পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সংযোগ বৃদ্ধিতে সহযোগিতা
ভ্যাকসিন উন্নয়ন, ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা, এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, আসিয়ান ও ভারত তাদের জাতীয় অগ্রাধিকারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিষ্কার ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির সমাধান অনুসন্ধান করবে। এই যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে উভয় পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সমন্বিতভাবে কাজ করতে আগ্রহী।

সংযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, “কানেক্টিং দ্য কানেক্টিভিটিস” পদ্ধতির মাধ্যমে আসিয়ান সংযোগের মাস্টার প্ল্যান (এমপিএসি) ২০২৫ এর সাথে ভারতের উদ্যোগগুলিকে একীভূত করার চেষ্টা করা হবে। আঞ্চলিক সংহতির লক্ষ্যে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক মহাসড়ক সম্পন্ন এবং চালু করার দিকে জোর দেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতে কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনাম পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

সম্মেলনের শেষে, আসিয়ান ও ভারত বহুপাক্ষিকতা শক্তিশালীকরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক কাঠামোর মাধ্যমে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, টেকসই উন্নয়ন প্রচার করা এবং আন্তর্জাতিক আইনের নীতিগুলি সমুন্নত রাখার জন্য উভয় পক্ষ যৌথভাবে কাজ করার লক্ষ্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

উভয় পক্ষ প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং মানুষে-মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও গভীর করে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক